দেশের ৫৭ জেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ আজ সোমবার। সকাল ৯টায় ভোট শুরু হয়ে চলবে বিকাল ২টা পর্যন্ত। নির্দলীয় এ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রতিটি উপজেলা সদরে স্থাপিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। আর প্রতিটি কেন্দ্র ইসি কার্যালয়ের মনিটরিং সেল থেকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষে থাকবে সিসিটিভি। আইন অনুযায়ী- সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর আগে গত শনিবার দিনগত মধ্যরাতে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। এতে ভোটকক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ভোটকক্ষে ভোটররা যাতে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিতে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ভোটগ্রহণের আগে দুদিন, ভোটগ্রহণের দিন ও পরের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের একটি করে মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ১৯ বৃহত্তর জেলায় ২ প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় এক প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব পরিচালক (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিসিটিভি ও ইভিএম মেশিন যথাযথভাবে সচল রাখার স্বার্থে এবং ভোটাররা যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন, সেজন্য ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা সদরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও এই নির্বাচনকে ঘিরে বৈধ অস্ত্র বহনে ভোটের আগে পরে এবং ভোটের দিনসহ মোট সাত দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সহকারী সচিব মো. মাছুদুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারদেরও। এছাড়াও এ সংশ্লিষ্ট কপির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, নির্বাচন কমিশনের সচিব, পুলিশের আইজিপি, র্যাব প্রধানসহ বিভিন্ন রেঞ্জের প্রধানদের কাছেও।
আদেশে বলা হয়েছে, ১৭ অক্টোবর ৬১ জেলা পরিষদ (তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত) পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-৬ এর স্মারক মোতাবেক আর্মস অ্যাক্ট-১৮৭৮-এর ধারা ১৭ (ক) (১) অনুযায়ী এ আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, ভোটের আগে তিন দিন ভোট গ্রহণের দিন এবং ভোটের পরে তিন দিন মোট সাত দিন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীগণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল/বহন/প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আর্মস অ্যাক্ট-১৮৭৮ সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে আদেশে।
তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে ভোলা ও ফেনীতে সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এছাড়া নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসির তথ্যানুযায়ী, জেলা পরিষদে মোট ৯২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্যদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৬০৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৪৮৫ জন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছয় হাজার ৮৬৬ জন জনপ্রতিনিধি। ৫৭ জেলার স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ৪৬২ এবং ভোটকক্ষ হচ্ছে ৯২৫টি।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর এসব জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আরো স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে ২০০০ সালে যে আইন প্রণীত হয়, তা বাস্তবায়িত হয় ২০১৬ সালে। ওই বছর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদ আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ মোট ২১ জনের সমন্বয়ে জেলা পরিষদ কার্যক্রম শুরু করে।